ছিন্নপত্র

সবুজ (জুলাই ২০১২)

আদিব নাবিল
  • ২০
  • ১৭২
উন্নয়ন নামের ভীষণ যন্ত্রতন্ত্রের মাঝে একখন্ড সবুজ আশ্রয়। নগরায়নের ভুক্তাবশিষ্ট হয়ে বেঁচেবর্তে থাকা পাখপাখালির সময়ের ঠিকানা। রুটিন করে প্রত্যুশ-অপরাহ্ণ সীমানা টেনে স্বাস্থ্য কিংবা প্রকৃতি প্রত্যাশী কিছু মানবসন্তান বিচরণ করে এখানে। আপোষ বন্টকে প্রাপ্ত সময়ে পেশা কিংবা অন্ধকারের নেশায় ভীড় করে ভিন্ন ভাবের কিছু দু’পেয়ে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সুবেশী পোশাকে নীল ধোঁয়া ওড়ায়। ঋতুচক্রে মানুষের ভূষণ বদলায়, সবুজ পটভূমির রং পাল্টায়।

জীবন এখানে হরেক রকম। কেউ অতিথি, কেউ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রজন্মান্তরে স্থায়ী। জীববিজ্ঞান এদের ভাগ করে মানুষ, গাছ, পাখি, চারপেয়ে ছায়াশিকারী কিংবা উচ্ছিষ্টভোগী প্রাণী হিসেবে। পরিবেশ, প্রতিবেশ, খাদ্যচক্র- সব এখানে মিলেমিশে একাকার।

এই ছোট্ট সমাজের একটি খণ্ডচিত্রে, পার্কের কোণে ঝাকড়া ডালপালা কান্ড শিকড় আর অগুনতি পাতা নিয়ে এক বৃক্ষ পরিবার। বৃক্ষ মা তার পাতা সন্তানদের নিয়ে বসেছেন। পাতাঝরার দিন আগতপ্রায়। একটা দুটো করে প্রতিদিন বিদেয় নিচ্ছে হলদেটে মুচমুচে পুরণো পাতা’রা।

-একসাথে থাকিস বাছারা….ঝড় বাতাসে মিলে মিশে থাকিস গায়ে গা ঠেকিয়ে…..তারপর আর ক’টা দিন…..আবার তোরা ফিরে আসবি, আমাকে পাবি, আমার অংশ হবি……’’
-আমরা চলে গেলে আমাদের নতুন ভাই-বোনেরা আসবে, তাই না মা?
-আমাদের জায়গা দিয়ে নতুন কুঁড়ি গজাবে!
-আমরা মরে যাবো…..
-আমরা কিভাবে ফিরবো মা?’’

সন্তানদের মন্তব্য, আর যত প্রশ্ন তীক্ষ্ম শব্দ হয়ে মায়ের কানে বাজে। এর উত্তর আছে তার কাছে। কিন্তু কিভাবে বলবেন, ঝরে পড়া পাতা মাটিতে মিশে সার হয়ে ওর মায়ের শরীরে পুষ্টি জোগাবে। জৈব উপাদান হয়ে ফিরবে বৃক্ষ শরীরে। মা বলতে পারেন না, বিমূঢ় হয়ে বসে থাকেন। ভাবেন, বাচ্চাগুলোর পানির পিপাসা লেগেই থাকে। এতদিন শিকড়ে বয়ে আনা জল ওদের জুগিয়ে গেছেন। ওরাও সূর্যের আলো মিশিয়ে অকৃত্রিম খাদ্যপ্রতিদান দিয়ে গেছে। নাড়ি ছেড়া বাছাগুলো পানির জন্য হা-পিত্যেশ করবে- কিভাবে সহ্য করবেন মা? প্রতিবছর এটি ঘটে আসছে, তারপরেও অনুভূতিটি নতুনের মত মাকে বিহবল করে চলে।

পাতার আচ্ছাদন না থাকায় পাখিগুলোও অনেক দিন এমুখো হবে না। ছায়াপ্রত্যাশীরা এপথ ভুলবে। ন্যাড়া গাছে শুন্য নীড়। তারপর আসবে নতুন পাতার দিন। ফুল ফুটবে, ফল ধরবে। সবুজ গাছ আবার পাখির কিঁচির মিচিরে সরগরম হবে। আসবে নানা রংয়ের প্রজাপতি, মধুলোভী ভ্রমর। ছায়ায় জিরোবে পুরণো মানুষ নতুন পোশাকে….ভাবতে ভাবতে সবাই কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে। গাছের প্রস্বেদন, নাকি শোকের বাষ্পীভবন- একটা পাতলা মেঘের আবরণ তৈরি করে রাখে রাতভর।

পাতাকুড়ানি মেয়ের দলের হৈ চৈয়ে গাছের ঘুম ভাঙে। রোদের আলো সরাসরি কান্ড, ডালপালায় আরামের অনুভূতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এসে গেছে পাতাঝরার দিন! গাছের বুক ছলকে ওঠে। কাল রাতের বাতাসে সম্পর্ক ছেদের লয় বয়ে গেছে বাগানজুড়ে! পত্রহীন উদোম শরীরের দিকে তাকিয়ে বৃক্ষের অন্তর খাঁ খাঁ করে।

-ওগো পাতা কুড়ানি মেয়ে, আমার ছোট ক’টা মা-নেওটা বাচ্চা আছে ওখানে। ওদের খুব তিয়াস লাগে। দোহাই লাগে গো তোমার, ওদের জলে ভাসিয়ে দিও…..

বৃক্ষ মায়ের ডাক শুনলো কিনা কে জানে। একটু পরে দেখা গেল ছেঁড়া জামা গায়ে দুটো মানব শিশু পাশের লেকে পাতার নৌকো ভাসানোতে ব্যস্ত।

মায়ের চোখ থেকে এক ফোঁটা জল ঝরে পড়ে, যেন রাতভর চুইয়ে পড়া জোসনা জমে চন্দ্রকণা খসে পড়লো। নিজেকে সামলে নিয়ে খেয়াল করে মা, একঝাক নতুন পল্লব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। চকচকে সবুজে ধীরে ধীরে ছেয়ে যাচ্ছে রুক্ষ শরীর। তরতাজা ক্লোরোফিল ঠাসা তেজোদ্দীপ্ত শিরা ছড়ানো প্রজন্ম প্রস্তুত।

নরম আদরে ভরিয়ে দিয়ে মা বলেন, আয় রে আমার সবুজ সন্তানেরা….তোরাই গড়বি নতুন দিন!

ফ্যাঁকাশে কাল হয়েছে গত
তানপুরায় নতুন তার
নষ্ট জামা ফেলে গায়ে নতুন মলাট
বক্ষে আশা, ধমনীতে ধরনীর আশির্বাদ
শুদ্ধ বাতাস যদি পায়-
আসুক চাই না আসুক বৃষ্টি
নতুন কিছু করতে বুক চিতিয়ে
দাঁড়ায় সূর্যপ্রতিভূ বীজ সন্তান!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
পন্ডিত মাহী এটি একটি অতি চমৎকার চমৎকার গল্প।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ..........................সবুজ সন্তানেরা….তোরাই গড়বি নতুন দিন...এগিয়ে আসতে পারবে তো তারা? চমতকার লিখেছেন। শুভেচ্ছা রইল।
মনির মুকুল বৃক্ষরাজির কথপোকথনে উঠে আসা বেশ সুন্দর একটি গল্প।
আরিফ খান পছন্দের খাতায় যোগ হল।
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ অদ্ভুদ সুন্দর ভাবনাগুলোকে সাজিয়েছো মনের মত করে । ভাল লাগল খুব।
মিলন বনিক অভূতপূর্ব...অসাধারণ...অভাবনীয়...নাবিল ভাই আর কিছুই বলার নেই...গল্পের সাথে কবিতার স্বাদও পেলাম...এত নান্দনিকতা..এত অনুভুতি...প্রিয়তে....
স্বাধীন পাতাদের পুণর্জন্মে মুখরিত হোপ প্রতিটি বৃক্ষ, সবুজে ছেয়ে যাক সমস্ত ধরা।
Md. Akhteruzzaman N/A শেষে একটা কবিতা পেলাম। এমনিতেও পুরা গল্পটা আমার কাছে বেশ কাব্যময় মনে হয়েছে। খুব ভাল।
রোদের ছায়া (select 198766*667891 from DUAL) এভাবে কখনো ভাবিনি আসলে ..........কিন্তু আপনার লেখাটি পড়ে মনে হচ্ছে সত্যি হয়ত গাছগুলো এভাবেই ভাবে , অনুভব করে জীবনের নানা মুহূর্ত ......তবে গাছের সন্তান হিসাবে পাতার চেয়ে কিন্তু ফল বেশি মানানসই হত ( আমার মতে )...শুভকামনা থাকলো //
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি নরম আদরে ভরিয়ে দিয়ে মা বলেন, আয় রে আমার সবুজ সন্তানেরা….তোরাই গড়বি নতুন দিন! // sundor sabolil lekhar dhoron sob miliye valo laglo adib nabil suvokamona roilo..........

০২ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫